অলংকরণ: আরাফাত করিমসোমবার
শেষ বিকেলে সে পুরোনো বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠল। খুব কম কষ্টেই হয়ে গেল বাসা পাল্টানো; সে সবকিছু দুটো স্যুটকেসে আঁটিয়ে নিয়ে নিজেই নিয়ে গেল তিন ব্লক পরের নতুন জায়গায়। মাত্র দুবার থেমে জিরিয়ে নিতে হয়েছিল তাকে। বয়সের হিসাবে সে বেশ শক্তিশালী। একজন লোক এসে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল, বেশ সহৃদয় দেখতে লোকটা। কিন্তু আমি অপরিচিত কারও কাছ থেকে সাহায্য নিতে বারণ করেছিলাম তাকে।
আমার মনে হয়, জার্মান মহিলাটি তাকে যেতে দেখে খুশিই হয়েছে। সে তাকে বেশ সন্দেহের চোখে দেখত। আমি নিজে এই জার্মান মহিলাকে বেশ অপছন্দ করি। ঘরের কিছু জিনিস সব সময় সরানো দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম (সে অবশ্য কষ্ট করে হলেও জিনিসগুলো আগের জায়গায় সরিয়ে নিত, এমনিতেও সে তেমন গোছানো নয়), ইদানীং আমার সন্দেহ হচ্ছিল, মহিলা সম্ভবত চিঠিপত্রগুলোও দেখে। খামের ওপর তেলতেলে হাতের ছাপ ছিল, এখনো বেশ ঠান্ডা, পোস্টম্যানের দস্তানা ছাড়া বেরোবার কথা নয়। নতুন বাসায় বাড়িওয়ালির বদলে বাড়িওয়ালা; মনে হয়, সব মিলিয়ে এটাই ভালো।
শেষ বিকেলে সে পুরোনো বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠল। খুব কম কষ্টেই হয়ে গেল বাসা পাল্টানো; সে সবকিছু দুটো স্যুটকেসে আঁটিয়ে নিয়ে নিজেই নিয়ে গেল তিন ব্লক পরের নতুন জায়গায়। মাত্র দুবার থেমে জিরিয়ে নিতে হয়েছিল তাকে। বয়সের হিসাবে সে বেশ শক্তিশালী। একজন লোক এসে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল, বেশ সহৃদয় দেখতে লোকটা। কিন্তু আমি অপরিচিত কারও কাছ থেকে সাহায্য নিতে বারণ করেছিলাম তাকে।
আমার মনে হয়, জার্মান মহিলাটি তাকে যেতে দেখে খুশিই হয়েছে। সে তাকে বেশ সন্দেহের চোখে দেখত। আমি নিজে এই জার্মান মহিলাকে বেশ অপছন্দ করি। ঘরের কিছু জিনিস সব সময় সরানো দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম (সে অবশ্য কষ্ট করে হলেও জিনিসগুলো আগের জায়গায় সরিয়ে নিত, এমনিতেও সে তেমন গোছানো নয়), ইদানীং আমার সন্দেহ হচ্ছিল, মহিলা সম্ভবত চিঠিপত্রগুলোও দেখে। খামের ওপর তেলতেলে হাতের ছাপ ছিল, এখনো বেশ ঠান্ডা, পোস্টম্যানের দস্তানা ছাড়া বেরোবার কথা নয়। নতুন বাসায় বাড়িওয়ালির বদলে বাড়িওয়ালা; মনে হয়, সব মিলিয়ে এটাই ভালো।
নতুন বাসায় পৌঁছেই সে এক বুড়ো লোকের কাছ থেকে চাবি নিল, যে নিচতলার সামনের ঘরে থাকে। বাড়িওয়ালা বাইরে ছিল, কিন্তু বলে গেছে তার আসবার কথা। সাদা চুলের বুড়োটি বেশ অমায়িক, হাসিখুশি। সে স্যুটকেসগুলো তিনতলায় তুলল সরু সিঁড়ি দিয়ে, এক এক করে। দিনের বাকি সময় ঘর গোছাতেই লেগে গেল। ঘরটা আগেরটার চেয়ে ছোট, কিন্তু পরিষ্কার অন্তত। সে কাপড়গুলো কাবার্ডে আর ওয়ার্ডরোবে রাখল। কোনো তাক নেই কোথাও, তাই সসপ্যান, কাপ, প্লেট, কফি পট—এসবই ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ারেই রাখতে হবে। আমি ঠিক করলাম, টি–পটটা ছোট টেবিলের ওপর রাখা হবে। বেশ ভালো দেখতে ওটা।
সে বাড়িওয়ালার দেওয়া চাদর আর কম্বল দিয়ে বিছানা করল। ঘরটা দক্ষিণমুখী, তাই ঠান্ডাই হবে। ভাগ্যিস একটা বৈদ্যুতিক রুমহিটার আছে। সে সব সময় উষ্ণতা পছন্দ করে, যদিও আমি তাপ–শৈত্য নিয়ে অতটা উদ্বিগ্ন নই। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঘরটা ঠিক গোসলখানার পাশেই, যেটি আসলে দরকার।
নোটবুকটা টেবিলের ওপর থাকবে, টি–পটের পাশে।
আগামীকাল তাকে বাইরে যেতে হবে কিছু সদাইয়ের জন্য। কিন্তু এখন সে বিছানায় যাবে।
মঙ্গলবার
আজ সকালে সে বিছানায় শুয়ে আবার ঘুমোবার চেষ্টা করছিল। আমি ঘড়ির দিকে চেয়ে ছিলাম এবং তার সঙ্গে একমত হচ্ছিলাম যে তোশকটা বেশ পাতলা আর শক্ত, আগেরটার তুলনায়। প্রায় নয়টা বেজে গেয়েছিল, আর আমি তাকে বলছিলাম উঠে অ্যালার্ম শেষ হওয়ার আগেই ঘড়িটা বন্ধ করতে।
কেউ একজন পা টিপে টিপে সামনের সিঁড়িতে এল এবং বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকাল। আবিষ্কার করলাম, দেয়ালগুলো প্রশস্ত নয়, শব্দ আসে। সে পাশ ফিরে আবার ঘুমাতে যেতেই বাথরুমের ব্যক্তিটি ভীষণভাবে কাশতে লাগল। এরপর গলা খাকারি, থুতু ফেলা আর ফ্লাশের আওয়াজ পাওয়া গেল। আমি নিশ্চিত এটা কে, নিচতলার বুড়ো লোকটা হবে। বেচারার নিশ্চয়ই ঠান্ডা লেগেছে। সে পাক্কা আধঘণ্টা গোসলখানায়ই কাটাল—অনেক সময়; এর মধ্যেই সে অপ্রীতিকর শব্দ করল অনেকবার। আমি দেখলাম, গোসলখানার পাশের ঘরের কিছু অসুবিধাও আছে; আর শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম, বাড়িওয়ালা কেন এত সস্তায় ঘরটা ভাড়া দিতে রাজি হয়েছে।
অবশেষে তাকে উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করতে (আমার সব সময় মনে হয়, টাটকা বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, যদিও সে অত পছন্দ করে না) আর রুমহিটার চালাতে রাজি করাতে পারলাম। সে আবার বিছানায় ফিরতে চাইছিল, কিন্তু আমি তাকে বললাম কাপড় পরতে। তাকে বাজারে যেতে হবে, খাওয়ার কিছু নেই ঘরে। সে গোসলখানায় গেল, তক্ষুনি নয়, অন্য পায়ের আওয়াজও
No comments